সংবাদদাতা, বসিরহাট :- “আমরা বাঁচতে চাই, আমাদের বাঁচতে দেওয়া হোক। কতজন খুন হয়েছে বলতে পারবো না। আর কত জন খুন হতে বাকি আছে তাও বলতে পারবো না”। ফাঁকা হয়ে যাওয়া গ্রামে অবশিষ্ট মানুষের আর্তি এটাই। উজাড় হয়ে যাওয়া সন্দেশখালি ভাঙ্গিপাড়া ও রাজবাড়ী এলাকার মানুষের আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে। পুলিশের সংখ্য কমতেই নতুন করে আক্রমণের ভয়ে আজও বহু মানুষ গ্রাম ছাড়ছেন। যারা নিরুপায় হয়ে এখনও রয়ে গেছেন তাদের কাছেও হুমকির ফোন আসছে গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার। চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকার আনাচে কানাচে। সন্দেশখালি ত্রাস তৃনমূলের ব্লক সভাপতি শাহাজাহান শেখে ও তার সাকরেতদের বিরুদ্ধে বিজেপি কর্মী খুনের অভিযোগ নেজাট থানায় দায়ের হলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে সাহস দেখায়নি বলেই অভিযোগ। পাশাপাশি খুন হওয়া তৃনমূল কর্মী কাযুম মোল্লার বাবা লিয়াকত আলী মোল্লা নেজাট থানায় ছেলের খুনের জন্য স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। এছাড়াও নিখোঁজ দেবদাস মন্ডলের ভাইও নেজাট থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেছে। কেন্দ্রীয় আইবি এর একটি প্রতিনিধি দলও এদিন এলাকা পরিদর্শনে এসেছে বলে প্রশাসন সুত্রে জানাগেছে। সোমরার বসিরহাট মহকুমায় বিজেপির ডাকা ১২ ঘন্টার বনধে ভাল সাড়া মিলেছে। এদিন বিজেপির পক্ষথেকে শাহাজাহান শেখের ফাঁসির দাবি করা হয়েছে বিজেপির পক্ষথেকে।
সন্দেশখালিতে বিজেপি কর্মীদেরকে নৃশংস ভাবে খুনের প্রতিবাদে এদিন সকাল ছয়টা থেকেই বিজেপি কর্মীরা রাস্তায় নেমে যায় বনধ সফল করতে। সকাল ৭টা নাগাদ বারাসাত হাসনাবাদ শাখার ভ্যাবলা স্টেশনে রেল অবরোধ করে বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা। ঘন্টা দুই পরে যাত্রীদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে অবরোধ তুলে নেয় বিজেপি। বিজেপির দাবি বসিরহাট মহকুমার সর্বত্রই বনধ সার্থক ও শান্তিপূর্ণ। বসিরহাট শহর এলাকায় বনধের প্রভাব সবথেকে বেশি। বনধের পাশাপাশি জেলাজুড়ে কালাদিবস পালন করে বিজেপি। তবে তৃনমূলের দাবি বিজেপির বনধে মানুষ সাড়া না দিয়ে রাস্তায় নেমেছে। সকালের দিকে আক্রান্ত এলাকা হাটগাছি অঞ্চলের ভাঙ্গিপাড়া ও রাজবাড়ী গ্রামে দোকান পাট বন্ধ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহিরাগত তৃনমূলীরা এলাকায় ঢুকে দোকানপাট খুলতে বাধ্যকরে। বহিরাগতদের এলাকায় ঢুকতে দেখে নতুন করে আক্রমণের আতঙ্ক ছড়ায়। তৃনমূলের ব্লক সভাপতি শাহাজাহান শেখের ও তার ২০ জন সাকরেতের বিরুদ্ধে রবিবার রাত্রে নেজাট থানায় খুনের অভিযোগে দায়ের করে মৃত প্রদীপ মন্ডল এর স্ত্রী পদ্মা মন্ডল। পাশাপাশি নিখোঁজ দেবদাস মন্ডলের ভাই নিমাই মন্ডল নেজাট থানায় একটি নিখোঁজ এর অভিযোগ দায়ের করেন। পাশাপাশি দেবদাসের পরিবার সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। এদিন দুপুরে কেন্দ্রীয় আইবির ৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল দুই গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে। অনেক নমুনা সংগ্রহ করে। সুত্রের খবর, কেন্দ্রীয় আইবির সংগৃহীত নমুনার মধ্যে রয়েছে ভিডিও ক্লিপিংস। তারা এলাকার অবস্থা ও শনিবার রাত্রের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করে দিল্লিতে পাঠাবে বলে প্রশাসন সুত্রে জানাগেছে। এদিন সকাল থেকে মোতায়েন করা পুলিশ বাহিনীর অনেক পুলিশ কর্মীকে নিজেদের এলাকায় ফেরত পাঠানোয় আক্রান্ত গ্রাম গুলিতে পুলিশের সংখ্যা কমে যাওয়ায় মানুষের মধ্য আরও আতঙ্ক দানা বাঁধছে। তাদের দাবি এলাকায় একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ও আরও কিছুদিন পুলিশের টহলদারি প্রয়োজন। এদিন এলাকায় ঢুকেই দেখাগেল বেশিরভাগ বাড়িতেই তালা ঝুলছে। বন্ধ দরজার ফাঁক ফোকোর দিয়ে দেখাগেল ঘরের মধ্যে অবিন্যস্ত ছড়িয়েছে ছিটিয়ে জিনিসপত্র। বোঝাযাচ্ছে কোন মতে ঘরে তালা দিয়েই ঘর ছেড়েছে পরিবার গুলি। গ্রামে ঢুকতেই আনাচে কানাচে থেকে কিছু মুখ উঁকিঝুঁকি মারতে দেখা যায়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে গুটি আরও কয়েকজন বেরিয়ে আসে। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেও তারা তাদের নাম ও পরিচয় জানাতে চায়নি। সবায়ের মুখেই একটাই দাবি শনিবারের ঘটনার পেছনে শাহাজাহান ও দলবলই দায়ী। তারা সকলেই শাহাজাহানের ফাঁসির দাবি জানায়। প্রায় পুরুষ শূন্য এলাকায় মহিলারা দলবদ্ধ ভাবে থাকার চেষ্টা করছে বলে তারা জানান। এখনও গ্রামের বহু পুরুষ এবং মহিলার খোঁজ মেলেনি। নিখোঁজ মানুষ গুলিরও কোন হদিস দিতে পারেনি পুলিশ। গ্রামবাসীদের অনুমান শাহাজাহানকে গ্রেপ্তার না করলে আবারও গ্রাম আক্রান্ত হতে পারে, খুন হতে পারে মানুষ। তবে পুলিশ যে সহজে তাকে গ্রেপ্তার করবে না সে বিষয়েও নিশ্চিত গ্রামবাসীরা। গ্রামে পা রেখে অনুধাবন করাযায় মানুষের হাহাকার, স্বজন হারার কান্না। এক কথায় বলতে গেলে উজাড় হয়ে গেছে গোটা ভাঙ্গিপাড়া ও রাজবাড়ী।