### গল্পের লেখিকা – রীনা মন্ডল ###
সেদিন বিকালে নন্দনে বসে অপেক্ষা করছিল প্রিয়ম, রিয়া আজ দেখা করবে বলেছে ৫টায়
কি যেন কথা আছে বলছিল ও।
কিন্তু পৌনে ছয়টা বেজে গেল এখনো তো রিয়া আসলো না,আর তার ফোন টাও বন্ধ হয়ে আছে সেই কখন থেকে। বিগত কয়দিন ধরেই রিয়াকে বিষন্ন মনে হচ্ছিল প্রিয়মের,সেই জেদি হাসিখুশি মেয়েটা হঠাৎই কেমন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ঘড়িতে তখন ছয়টা পনেরো মিনিট, সবেমাত্র প্রিয়ম একরাশ অভিমান আর প্রশ্ন নিয়ে ফিরে যাবে ভাবছিল ঠিক সেই সময় একটা অচেনা বাচ্চা ছেলে এসে ওর হাতে একটা ভাঁজ করা কাগজ দিয়ে চলে গেল।
প্রিয়ম খানিকটা অবাক হয়ে নন্দনের ভিড়ে ছেলেটাকে খুঁজতে লাগলো, কিন্তু তার আর দ্যাখা পেলনা। তারপর হাতের সেই ভাঁজ করা কাগজটা খুলেই হতভম্ব হয়ে গেল।
“তুমি আমাকে ভুলে যাও,এতদিন তোমার সাথে শুধুমাত্র ভালোবাসার অভিনয় করছিলাম আমি,এছাড়া আর কিছুই না। সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ে ঠিক করেছে মা বাবা,যদি কোনোদিন সত্যিই আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে আমাকে ভুলে যাও একটা দুঃস্বপ্নের মতো।”
ইতি…….
তোমার রিয়া
এটা কী? ভেবে উঠতে পারলো না প্রিয়ম। এইভাবে রিয়া তার সাথে প্রতারণা করতে পারেনা।কাগজ খানা হাতে তুলে নিয়ে ছুটে গেল রিয়ার বাড়িতে।
সত্যিই তো সেই বাড়িতে বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত সবাই, কিন্তু রিয়া? রিয়া কোথায়? তাকে তো দ্যাখা যাচ্ছে না। তার ফোন টাও যে বন্ধ, রিয়ার মা জানতেন তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে,তাই তাকে তাদের বাড়ির সামনে ঘুরতে দেখে একটা সণ্ডা মার্কা লোক পাঠিয়ে প্রিয়ম’কে তাড়িয়ে দিলেন কুকুরের মতো।
আগামী একটা সপ্তাহ সে রিয়ার বাড়ির আসেপাশে ঘুরতে লাগলো, শুধু একবার,একবার যদি রিয়ার দ্যাখা মেলে এই আশায়।
দেখতে দেখতে পাঁচটা দিন অতিক্রম করে গেল, প্রিয়মের উদভ্রান্তের মতো অপেক্ষা আর শেষ হলো না। আগামীকালই রিয়ার বিয়ে,সকাল থেকে হইহুল্লোড়ের সাথে সবাই ব্যস্ত বিয়ের আয়োজনে আর প্রিয়ম ‘ সে এখনও তার মনের ভিতরের প্রশ্ন নিয়ে অপেক্ষারত, কেন?কেন? কেন করলে এমন তুমি রিয়া?
সেই যে ছেলেটা নন্দনে তার হাতে রিয়ার চিঠি দিয়ে গিয়েছিল সে আবারও একটা ভাঁজ করা কাগজ প্রিয়মের হাতে দিয়ে দৌড়ে চলে গেল।
প্রিয়মের বুকটা ধরাশ করে উঠল, আবার কি লিখেছে রিয়া? সে ভয়ে ভয়ে ধীরে কাগজ টা খুললো
“তুমি ভাবছ আমি প্রতারক, তোমার বিশ্বাস নিয়ে আমি পুতুল খেলা খেলেছি। না’গো, তোমাকে আমি সত্যিই ভালোবেসেছি, আমার মন,আমার শরীর,আমার ভালোবাসার উপর শুধু তোমারই অধিকার তাই অন্য কারোর হাতে সিঁথিতে সিঁদুর পড়তে পারবোনা। তাই তোমার ভালোবাসাকে বুকে আঁকড়ে ধরে তোমার হয়েই থাকবো। এবার তবে আসি আমি”
ইতি…….
তোমার ভালোবাসা রিয়া
প্রিয়মের দু’চোখে তখন অশ্রুধারা ঝরে পরছে,চকিতে চাইলো সে একবার রিয়ার বাড়ির দিকে…জানালার বাইরে এলোমেলো চুলে দাঁড়িয়ে আছে রিয়া
সেই শেষ দেখা রিয়ার…………
তারপর প্রায় আধঘণ্টা কেটে গেল,আচমকাই কার যেন চিৎকার শোনা গেল,তারপর একে একে শুরু হয়ে গেল কান্নার শব্দ
হঠাৎই সিলিং থেকে রিয়ার ঝুলন্ত দেহটাকে প্রিয়ম খানিকটা দেখতে পেলো খোলা জানালার ভিতর দিয়ে।
প্রিয়ম নির্বাক হয়ে হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থাকলো,আর ভাবলো — কেউ ভালোবাসার জন্য প্রাণ দেয় আর কেউ তার ভালোবাসাকে বুকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকে আমরন।
হায়রে কপাল কেন সে আজ মরতে পারলো না?
কেন এই নির্মম মৃত্যু কাহিনীর সাক্ষী হয়ে থেকে গেল সে?