সুজয় মন্ডল, বসিরহাট :- উত্তর ২৪ পরগণার জেলার সুন্দরবন লাগোয়া ব্লক হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি প্রভৃতি ব্লক গুলির উপর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আছড়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঐ সমস্ত এলাকাগুলি।একদিকে প্রবল বর্ষণে নদীর জল বৃদ্ধি, অন্যদিকে প্রবল গতিতে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার ফলে নদীর জলোচ্ছাসে বাঁধের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। প্রবল বেগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এলাকা গুলির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার ফলে হিঙ্গলগঞ্জের পাটলি ,খানপুর ,বিশপুর, রুপামারি ,স্যান্ডেলের বিল, খুলনা ,লেবুখালী ,কালিতলা, গোবিন্দ কাটি, শীতলীয়া সহ সন্দেশখালির সেহারা, রাধানগর ,ভোলাখালি, বউ ঠাকুরানী, মনিপুর ,খুলনা, শীতলিয়া ,ন্যাজাট ,কালিনগর সহ প্রভৃতি জায়গায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একদিকে মরসুমের কৃষি ফসল হিসাবে মাঠের ধান গাছ লুটিয়ে পড়েছে ।অন্যদিকে প্রচুর গাছ গাছালি থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা তুষার গায়েন বলেন ,ঝড়ো হাওয়ার ফলেএকদিকে যেমন এলাকায় গাছগাছালি ভেঙে পড়েছে , অন্যদিকেগর্ভ ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে ,ঘরের চাল উড়ে গেছে ।অন্যদিকে প্রবল বর্ষণের ফলে জল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বাড়ির উঠানে ও জল জমে গিয়েছে। খানাখন্দ ভেসে যাওয়ায় পুকুরের মাছ বেরিয়ে গিয়েছে। ভান্ডার খালি থেকে সুব্রত পাত্র বলেন, আমাদের এই এলাকায় গাছগাছালি প্রচুর ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির জলে নদী বাঁধের অবস্থা খারাপ। এমনকি জল নিকাশি ব্যবস্থাও খুব ভালো নয়। তারপর আমাদের ভান্ডার খালিতে নদী বাঁধের সঙ্গে যুক্ত সুইজগেটের অবস্থা আদৌ ভালো নয়। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে আছে সুইচগেট টি। ভাঙ্গা সুইজগেট দিয়ে অনবরত জোয়ারের জল ঢুকে যায় গ্রামের মধ্যে। ইঞ্জিনিয়ার আসে যায়,কিন্তু ভাঙ্গা সুইচগেট আর ঠিক হয় না।ফলে এখানকার জল নিকাশি ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ ।তার উপর এই সময় বৃষ্টির দাপটে এলাকা একরকম জলে ভাসছে ।ধান ক্ষেত জলে ভরে গেছে। স্যান্ডেল বিলের বাসিন্দা বাসন্তি মন্ডল জানান, বুলবুলের প্রচণ্ড দাপটে রাতেই রাস্তার প্রচুর গাছ পড়ে যায়, বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়, যানবাহন ও মানুষের চলাচলের প্রচন্ড অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়।কাঠা বাড়ি মোড়ের নিকট লেবুখালী হাসনাবাদ রাস্তার উপর ঝড়ে বড় গাছ রাস্তার উপর পড়ায় সকালের দিকে গাড়ি ঘোড়া যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। এমনকি বাঁকড়া, হিঙ্গলগঞ্জ, স্যান্ডেল বিলের প্রচুর জায়গায় ঘরবাড়ি যেমন ভেঙে পড়েছে, তেমনি গাছগাছালি পড়ে পাশের ধানক্ষেত ও নষ্ট হয়েছে। রাজু বিশ্বাস বলেন, কালীতলার ডাকবাংলার মোড় থেকে শুরু করে কানাইকা্টি, গোবিন্দ কাটি, যোগেশগঞ্জ ,মাধবকাটি প্রভৃতি অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে মাটির ঘরবাড়িগুলি ।এছাড়া এডবেস্টার দেওয়া ঘরগুলি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।ঘরের চালে খড় নাই, ধান খেত নষ্ট হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মরশুমের ফসল যখন চাষিরা মাঠ থেকে ঘরে তুলবে ,তখনই বুলবুল এসে হানা দিয়ে যেন পাকা ধানে মই দিয়ে গেলো। রূপামারি থেকে স্থানীয় বাসিন্দা পরিতোষ দাস, জানান, আমাদের সুন্দরবন লাগোয়া এই সমস্ত অঞ্চল গুলির বেশিরভাগ জমি এক ফসলের। চাষীদের আশা-ভরসা মরশুমের এই একমাত্র কৃষিজ ফসলের উপর। সেই ফসল চাষীদের ঘরে তুলে নিয়ে যেতে দিলো না বুলবুল। এমনিতেই যথাসময়ে বর্ষা না আসার ফলে চাষিদের বীজতলা তৈরি করতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়েছিলো। যার ফলে চাষিরা সবাই সমস্ত জমিতে ঠিকঠাক ধান লাগাতে পারেনি। আর যতটুকু জমিতে ধান লাগানো হয়েছিলো সেগুলিও বুলবুল এসে নষ্ট করে দিলো। ধান গাছগুলি ঝড়ো হাওয়ায় বাড়িয়ে বৃষ্টির জলের মধ্যে ফেলে দিলো। এখন চাষিদের মাথায় হাত।কারণ এই ফসলের উপর নির্ভর করে সুন্দরবনের চাষাভূষা মানুষের সারা বছর সংসার চলে। এ বিষয়ে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অচেনা মৃধা বলেন,বুলবুলের প্রভাবে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের অধীন সমস্ত অঞ্চল গুলি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি রাস্তাঘাটের উপরেও গাছগাছালি পড়ে যান চলাচলের অসুবিধা হয়েছে, বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে ঠিকই। তবে আমাদের ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকে যুদ্ধকালীন তৎপরতার সাথে রাস্তা ঘাট থেকে গাছগাছালি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে যাতে যান বাহন ও মানুষ চলাচলের সুবিধা হয় এবং যত শীঘ্র সম্ভব বৈদ্যুতিক লাইন ঠিক করা যায় সে ব্যাপারেও আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।