সুমন পাত্র, ঝাড়গ্রামঃ- শীতের মরশুমে জঙ্গলমহলের সবচেয়ে বড়ো উৎসব টুসু পরব৷ আর টুসু মানেই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন হাট থেকে টুসু কিনে মাথায় করে বাড়ি ফিরে আসার সেই চিত্র দেখা যায়নি এখনো৷ স্বভাবতই এই টুসুর বাজার না জমায় হতাশ টুসু শিল্পীরা। আধুনিক সভ্যতার আলো যত এসে আমাদের সমাজ কে আলোকিত করছে ঠিক ততোটাই যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত করছে জঙ্গলমহলের টুসু শিল্পীদের জীবন। কারন বেশ কয়েবছর ধরেই চলছে টুসুর মন্দা বাজার । তবুও রুজির টানে আর সুদিন ফিরে আসার অপেক্ষায় এখনো হাটে হাটে টুসু বিক্রি করে চলেছেন শিল্পীরা৷ জঙ্গলমহলের শিল্পীদের নেশা, পেশা আর দুচোখ ভরা আগামীর স্বপ্নে এখনো কাদামাটি মেখে ছাচে ফেলে তৈরি করেন মাটির পুতুল। তার উপর রংবেরঙের কাগজ আর নিপুন হাতে রঙ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেন টুসু প্রতিমা।

পৌষ সংক্রান্তীতে জঙ্গলমহলে টুসুর ব্যাপক চাহিদা ছিল। এই মরক সংক্রান্তি কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গ্রামে মেলাও বসে৷ এই মেলার মুল আকর্ষণ মোরগ লড়াই। মোরগ লড়াই এর ধারা অব্যাহত থাকলেও ধীরে ধীরে টুসু যেন বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলছে। গোপীবল্লভপুরের শিল্পী মোনমোথ তরাই বলেন আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে গোপীবল্লভপুরের বিভিন্ন হাটে টুসু বিক্রি করছি। কিন্তু দু তিন বছর ধরে টুসুর চাহিদা যেন কমে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন আগে গোপীবল্লভপুর ও ফেঁকো হাটে আগে একদিনেই প্রায় ৫০০ – ৬০০ করে টুসু বিক্রি করেছেন প্রত্যেকেই৷ আর এবার এক একজনের ৫০ -৬০ টির বেশী বিক্রি হয়নি।গোপাল মুর্মু নামে এক শিল্পী জানান বাকি টুসু যদি বিক্রি না হলে আমার অনেক ক্ষতি হবে।
কি কারনে টুসুর এমন মন্দা তা তারাও জানেন না। তবে বাজারে অন্যান্য জিনিসের মতো টুসুর দাম কিন্তু সেভাবে বাড়েনি৷ ৩০, ৫০, ১০০ টাকা মুল্যের টুসুও বিক্রি হচ্ছে না।তবে শুনেছি প্রশাসনিক ভাবে এখন টুসু নিয়ে নানান কর্মশাল হচ্ছে। টুসু পুজো নিয়ে মানুষ কে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। তাই হয়তো বা আবার কোনোদিন টুসুর বাজার ফিরবে সেই সুদিনের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।