অগ্নিভ ভৌমিক, বিশেষ সংবাদদাতা :- নারদাকান্ড তদন্তে নাটকীয় মোড়। মুকুল রায়কে সোফায় বসিয়ে, তারই সামনে সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জাকে নারদ-এর ‘টাকা লেনদেন’ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করল সিবিআই। সিবিআইয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, মির্জা স্বিকার করে নিয়েছে যে তিনিই নাকি মুকুল রায়ের এলগিন রোডের চারতলার ওই ফ্ল্যাটেই টাকা পৌঁছে দিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত এদিন দুপুর ১২ টা নাগাদ সিবিআই আধিকারিকরা মুকুল রায়ের ফ্ল্যাটে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় মির্জাকেও। তারপর মুকুল রায়ের সামনেই সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল নারদ-এর ‘টাকা লেনদেনের’ পুনর্নির্মাণ করে । যদিও মুকুল এই দাবি উড়িয়ে দেন। ষড়যন্ত্রের পাল্টা অভিযোগ করেন প্রাক্তন তৃণমূল এবং বর্তমানে বিজেপি নেতা।
বেশ কয়েক দিন ধরেই তিন বছর ধরে চলা নারদা তন্তে একের পর এক তথ্য সামনে আসে। এই তদন্ত বেগ পায় শুক্রবার থেকে। গ্রেফতার করা হয় পুলিশের কর্তা আইপিএস মির্জাকে। আদলতে পেশ করা হয় তাকে। ওই দিন বিকেলে মুকুলকে তলব; সময় চাইলে তা না দিয়ে পরের দিন তাকে নোটিশ পাঠানো। শনিবার মির্জা আর মুকুলকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা। আর রাত ফুরোলেই মির্জাকে নিয়ে মির্জাকে নিয়ে মুকুল রায়ের ফ্ল্যাটে সিবিআইয়ের হানা। সবটাই ছিল কোনো থ্রিলার মুভির ক্লাইম্যাক্স সিনের মত।
সিবিআইয়ের কথায় স্পষ্ট যে মুকুলের নির্দেশেই মির্জা ছদ্মপরিচিত ম্যাথুরের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি পৌঁছে দিয়েছিলেন তাঁর ওই এলগিন রোডের ফ্ল্যাটে। দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট জিজ্ঞাসাবাদের পর, টাকা ঠিক কিভাবে পৌঁছে দিয়েছিলেন, সেই সময় মুকুল কোথায় ছিলেন, কিভাবে টাকা লেনদেন হয়, এইসব তথ্য পুনর্নির্মাণ করেন সিবিআই আধিকারিকরা।
তদন্তকারীদের একটি অংশই ইঙ্গিত দিয়েছিল, মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই টাকা নেওয়ার। কিন্তু নারদ তদন্তের মোড় ঘোরে মির্জা গ্রেফতার হওয়ার পর।
সিবিআই সূত্রে খবর, গোটা স্টিং অপারেশনের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ম্যাথু স্যামুয়েল নিজে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে— তিনি মুকুল বাবুর নির্দেশেই মির্জাকে টাকা পৌঁছে দিয়েছিলেন। গোটা বিষয়টি স্পষ্ট করতে সিবিআই ম্যাথুকেও ডেকে পাঠিয়েছে। তাঁকেও মুকুল এবং মির্জার মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চায় সিবিআই।
তবে সমগ্র এই ঘটনাকেই ষড়যন্ত্র বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন মুকুল রায়। এ দিন টাকা ‘লেনদেনের’ ঘটনাক্রম পুনর্নির্মাণের পর মুকুল দাবি করেন, ‘‘এটা গোটা তদন্তে একটি রুটিন কাজ।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কোনও ভিডিয়ো ফুটেজ বা ছবিতে দেখা যায়নি যে আমি টাকা নিয়েছি। যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে আমি তৈরি।” তবে মির্জার বয়ানের যথেষ্ট প্রাসঙ্গিকতা আছে বলে মনে করছে সিবিআই আধিকারিকরা। কারণ তার বয়ান নারদা তদন্তের অনেক রহস্যের উদঘাটন করছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এ দিন সিবিআইয়ের ওই পুনর্নির্মাণ অভিযান রুটিন নয়, বরং তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।