সুজয় মন্ডল, বসিরহাট :- সমগ্র দেশব্যাপী ভোটের গরম হাওয়া মিটতে না মিটতেই ক্রমেই বেড়ে চলেছে প্রকৃতির উত্তাপ। সূর্যের প্রখর তেজ আর গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবাদহ ক্রমেই বেড়েই চলেছে । আর গ্রীষ্মের সেই দাবাদহে ক্রমে নাভিঃশ্বাস অবস্থা জনজীবনে। কিন্তু তাই বলে কি ঘরে বসে থাকা চলে , নিত্য প্রয়োজনে মানুষকে ঘরের বাইরে বেরোতেই হচ্ছে ।প্রচণ্ড দাবাদহের মধ্যে দৈনন্দিন কাজ সারতে গিয়ে শরীর থেকে ঝরছে ঘাম আর সেই সাথে প্রবল জল তৃষ্ণাই শুকিয়ে যাচ্ছে গলা। তাই জলের তৃষ্ণা নিবারণ করতে এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে মানুষ গ্রহণ করছে পেপসি কোকাকোলা ডাবের জল সহ বিভিন্ন ঠান্ডা পানিয়ের সাথে সীজন ফল হিসাবে তালের শাঁস। প্রবল গ্রীষ্মের সময় শরীর শীতল রাখতে সুমিষ্ট ও সুস্বাদু প্রাকৃতিক এই তালশাঁসের জুড়ি মেলা ভার। প্রচণ্ড গরমে শরীরের পক্ষে এই তালশাঁস খুবই উপকারী। তাই তালশাঁস বিক্রেতারা দেদার বিক্রি করছে গ্রাম শহরের বিভিন্ন মোড়ে হাটে বাজারের বিভিন্ন প্রান্তে এই তালশাঁস ।বসিরহাট হাসনাবাদ টাকি মালঞ্চ সর্বত্রই এই একই চিত্র দেখা গেল এদিন। তালশাঁস বিক্রয়কারীরা ছোট বড় সাইজ অনুযায়ী তিন থেকে চারটি কোয়া বিক্রি করছেন মাত্র ১০ টাকায়। এই তালশাঁস বিক্রি এদিন ছিল চোখে পড়ার মতো। মার্কেটে বসতে না বসতেই মুহূর্তের মধ্যেই বিক্রয় শেষ হয়ে যাচ্ছে মানুষের প্রবল চাহিদার কারণে। তাল কেটে তালশাঁস বার করে ক্রেতাদের হাতে হাতে দিতে রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যেতে হচ্ছে বিক্রয় কারীদের। কেউ ঐ স্থানেই আস্বাদন করছেন আবার কেউ বা পাত্রে করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন পরিবার পরিজনদের জন্য ।গরম বাড়ার সাথে সাথে প্রবল চাহিদা বেড়েছে এই তালশাঁসের ।তাল পাকার আগে এই কাঁচা অবস্থায় তালশাঁস বিক্রির কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে এক তাল ব্যবসায়ী কেনা হালদার জানান ,পাকা তালে আমাদের লাভ কম হয়। কারণ গাছ থেকে পাকা তাল যখন নিচে পড়ে ,অনেক তালই মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। তারপর যে তালগুলি আমরা বাজারে তুলি সেই তাল পিছু আমরা যা পাই তার থেকে এই কাঁচা তাল বিক্রি করে আমরা তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি লাভ পাই। তাছাড়া এখানে তাল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে ।তিনি আরো বলেন,পাকা তাল অনেক সময় সব বিক্রি হয় না ।অনেক তাল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রি করতে না পারলে নষ্ট হয়ে গেলে ফেলে দিতে হয়। কিন্তু সে দিক থেকে এই কাঁচা তাল থেকে কোয়া বের করে বিক্রি করা অনেক লাভজনক। তাছাড়া এই তালশাঁসের চাহিদা অনেক বেশি ।অনেক সময় আমাদের এমন অবস্থা হয় যে এই অত্যধিক চাহিদার কারণে অনেক খরিদ্দারকে আমরা দিতে পারি না ।তালশাঁস খেতে খেতে বিশিষ্ট সমাজসেবী ও শিক্ষক শচীন্দ্রনাথ মন্ডল মহাশয় জানালেন এই তালশাঁসের উপকারিতার কথা ।তিনি বলেন ,দেখুন এই তালশাঁস প্রকৃতির এমনই একটি দান যে গ্রীষ্মের প্রবল দাবদাহে শরীর ঠান্ডা রাখতে এর তুলনাই হয় না। এখন হয়তো নানান ধরনের কৃত্রিম ঠান্ডা পানীয় অনেকে গ্রহণ করেন ঠিকই। কিন্তু প্রাকৃতিক উপাদান হিসাবে ডাবের জলের পাশাপাশি এই তাল শাঁসের উপকার ও বেশ ।এমনকি এই প্রাকৃতিক উপাদানের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অন্যান্য ঠান্ডা পানীয়ের তুলনায় নেই বললেই চলে। তালের শাঁস আমাদের স্বাদ ইন্দ্রিয়ের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথেই এর সুমিষ্ট স্বাদ আমাদের পরিতৃপ্ত করে ।এমন কি শরীর মন ও চাঙ্গা হয়ে ওঠে । যত দিন যাচ্ছে কৃত্রিম জিনিসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে মানুষ স্বাভাবিক আহার অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন ।তাই যারা তালশাঁসের উপকারিতা উপলব্ধি করতে পারছেন তারা গরমের সময় এই তালশাঁস বেশি করে অনুসন্ধান করেন। যে কারণে দিনে দিনে এর চাহিদাও বাড়ছে। আর সেই সাথে এক শ্রেণীর মানুষ এই তাল শাঁস বিক্রিকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করছেন এবং তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। যদিও উঁচু উঁচু তাল গাছ থেকে তাল পেড়ে এই রোদে গরমে বসে তাল কেটে বিক্রি করা খুবই কষ্টের ব্যাপার । তিনি আরো বলেন, তাল কেটে মুহুর্তের মধ্যে অক্ষত অবস্থায় তাল থেকে কোয়া বের করাটাও রীতিমত একটি শিল্পের পরিচয়। অতি নিপুণ দক্ষতার সঙ্গে তাদের এই তালশাঁসের কোয়া বের করাটা প্রশংসা করতেই হয় । তিনি রসিকতা করে বলেন ,গরমে চপ শিল্পের থেকে এই শিল্প শরীর শীতল রাখতে মন্দ নয়। তাছাড়া ভোজন রসিক বাঙ্গালীদের কাছে তাল অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল হিসেবেই পরিচিত। তালের শাঁস যেমন প্রখর গ্রীষ্মের সময় আমাদের শরীরকে শীতল রাখে । তেমনি পাকা তাল থেকেও তৈরি হয় নানান ধরনের সুস্বাদু খাবার। যেমন তালরুটি তাললুচি তালের বড়া তালের পায়েস তালেরক্ষীর ইত্যাদি। সব মিলে তাল আমাদের খুবই প্রিয়।