অগ্নিভ ভৌমিক, বিশেষ সংবাদদাতা :- ৩৭০ ধারা বাতিলের দুমাস পার হয়ে গেছে। রাজনৈতিক মহলে, মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে নিয়ে অনেক আলোচনা – সমালোচনাও হয়েছে। জল গড়িয়েছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত। তবে এখন বলা যেতেই পারে, কাশ্মীর উপত্যকার জনজীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিকের পথে। দোকান-বাজার চলছে রমরমীয়ে। খুলে গেছে স্কুল কলেজও। যদিও সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির হার যথেচ্ছ কম। তবে পরিস্থিতি যে আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তেমনি অন্যদিকে শীথিল করা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণও। হাটিয়ে দেওয়া হয়েছে ১৪৪ ধারাও।
ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে আটক গৃহবন্দী নেতা-নেত্রীদেরও। তবে শর্ত সাপেক্ষে। তাদের দিয়ে বন্ডে সই করানো হচ্ছে। এক বছর কাশ্মীর সংক্রান্ত কোনও বিবৃতি দেওয়া বা বক্তব্য পেশ করতে পারবেন না— এমন শর্তে বন্ডে সই করলে তবেই মিলছে মুক্তি। পাশাপাশি জমা দিতে হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা।
প্রসঙ্গত, ৩৭০ ধারা বাতিলের পর ৪০০ জন নেতা-নেত্রীদের আটক করা হয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতিকে আটক করা হয়েছিল। আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ ৮৩ বছর বয়সি ফারুক আবদুল্লাকেও গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। তবে বুধবারই বেশ কিছু জম্মুর নেতা-নেত্রীদের মুক্তি দেওয়া হয়। এ বার পালা কাশ্মীরের।
৫ ই আগস্ট ৩৭০ ধারা বাতিলের আগে থেকেই কার্যত নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীরকে। কাশ্মীর ও লাদাখকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণার পর, উপত্যকায় কড়া নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল মোবাইল পরিষেবাও। গোটা দেশ থেকে কার্যত আলাদা হয়ে পড়েছিল জম্মু ও কাশ্মীর। দীর্ঘ দু’মাস এই অচলাবস্থার পর অবেশেষে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে কাশ্মীর। পর্যটকদের জন্যও খুলে দেওয়া হয়েছে উপত্যকা।
তারপরই শুরু হয়েছে শর্ত সাপেক্ষে আটক নেতা-নেত্রীদের মুক্তির প্রক্রিয়া। তবে প্রশ্ন উঠছে এই ‘শর্ত’ নিয়ে। শর্ত সাপেক্ষে মুক্তিদান কেন করা হচ্ছে? আর যদি সেইসকল নেতাদের ছাড়তেই হয় তাহলে তা শর্ত সাপেক্ষে কেন? এইসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। একটি বন্ডে সই করিয়ে তার পর ছাড়া হচ্ছে ওই সব নেতা-নেত্রীদের।
বন্ডের বয়ান অনুযায়ী, ‘এক বছরের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে আমি কোনও বিবৃতি প্রকাশ করব না, কোনও সভা-জমায়েতে বক্তব্য পেশ করব না এবং কোনও র্যালি-মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করব না। কারণ তাশান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে।’ বন্ডের দ্বিতীয় শর্ত, ১০ হাজার টাকা অগ্রিম হিসেবে জমা দিতে হবে এবং বন্ডের কোনও শর্ত ভঙ্গ হলে আরও ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে।
সূত্রের খবর আগামী ২৪ অক্টোবর ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ ব্লক পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে গোটা জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পরে এই প্রথম উপত্যকায় ভোট হচ্ছে। ৩০০ ব্লকের ভোটগ্রহণ ঘিরে উপত্যকায় রাজনৈতিক তৎপরতাও শুরু হয়েছে। ভোটগণনাও হবে ওই দিনই। সেই ভোটগ্রহণকে সামনে রেখেই এই নেতাদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে।