নিজস্ব সংবাদদাতা, বসিরহাট :- আবারও এনআরসি আতঙ্কে বসিরহাট ১ নম্বর ব্লকের সোলাদানার গ্রামে এক ইট ভাটার শ্রমিকের মৃত্যু । মৃতের নাম কামাল হোসেন মন্ডল(৩২) পেশায় ইট ভাটার শ্রমিক । পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরে জমির দলিল উপযুক্ত নথী কাগজপত্র নিয়ে চিন্তায় ছিল। কয়েকদিন ধরে বসিরহাটের বিডিও অফিসে আসে ওই যুবক। অনলাইনে নথিপত্র নিয়ে হাটাহাটি করছিল নানান দিকে। এমনকি এক নম্বর ব্লকের সহ-সভাপতি প্রশান্ত ঘোষের কাছে একাধিকবার যায়। তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে আশ্বাস দেন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এতে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু হতাশা আতঙ্ক পরিবারটা লেখাপড়া না জানার জন্য হতাশাগ্রস্ত হয়ে আজ রবিবার ভোর বেলায় বাড়ির পিছনে আমবাগানে গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। গতকাল বিকেল বেলায় কাগজপত্র সঠিক করার জন্য বসিরহাট ১’নম্বর বিডিওর কাছে এসেছিলো ওই যুবক। তারপর ৭১ সালের আগে জমির দলিল ছিল কিন্তু হতাশাগ্রস্ত, আতঙ্ক, চিন্তা দুর্বিষহ করেছিল মন্ডল পরিবারের । তার স্ত্রী টুকটুকি বিবি, ছোট দুটি পুত্র সন্তান সহ এই শ্রমিক পরিবার একমাত্র জীবিকা নির্বাহ করতো। মন্টু সর্দার সারা রাত্রি ধরে চিন্তা, আতঙ্ক, ভয় গ্রাস করেছিল কামাল হোসেন মন্ডল। তার স্ত্রী টুকটুকির সঙ্গে গতকাল শনিবার রাত্রে গভীর রাত পর্যন্ত কাগজপত্র নিয়ে আলোচনা করে। রবিবার সকাল বেলা বাবা শুকুর আলী, বলেন একমাত্র রোজগার শেষ সম্বল শেষ হয়ে গেল। ফুটবলার বাকীবিল্লাহ মন্ডল, প্রথমে দেখতে পান আমবাগানে কামাল হোসেন মন্ডলের মৃতদেহ ঝুলছে। তারপর বসিরহাট থানা খবর দিলে,পুলিশ এসে মৃতদেহটি উদ্ধার করে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শ্রমিক পরিবারের মৃত্যুর ঘটনার জেরে এলাকায় আতঙ্ক গ্রাস করেছে। ঠিক ২৪ ঘন্টা আগে মাটিয়ার কৃপালপুরের মন্টু মন্ডল, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তার আগে হিঙ্গলগঞ্জের বাঁকড়া গ্রামের বছর (৫৫) এর আলিয়া বেওয়ার মৃত্যু হয়েছে। তারপরে এনআরসি আরেকটা মৃত্যু কেড়ে নিল, এবার ঠিকানা বসিরহাটের সোলাদানা গ্রামের। এই ঘটনার জেরে গোটা বসিরহাট এলাকায় জুড়ে হয়রানি আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে চলছে বিডিও অফিসের এন আর সির লম্বা লাইনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ছে গ্রামবাসীরা। সবমিলিয়ে এনআরসি আর কত জনের মৃত্যুর হাতছানি দিচ্ছে সেই প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে। গত ৩৬ ঘন্টায় হিঙ্গলগঞ্জ, মাটিয়া, বসিরহাট, এলাকা মিলিয়ে মোট তিন জনের মৃত্যু হয়েছে, এনআরসির আতঙ্কে। এই ঘটনার পর গোটা উত্তর ২৪ পরগনা মানুষের মধ্যে ভীষণভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, মানুষ দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে কি হবে? এই এনআরসির পরে আমরা কি দেশে থাকতে পারবো? যদি না থাকতে পারি তাহলে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে? এই চিন্তায় মানুষ বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি জীবনহানিও হচ্ছে।