সংবাদদাতা, বারাসাত :- দীর্ঘ ২৬ মাসের আইনি লড়াই শেষ। অবশেষে আজ অনুপম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত মনুয়া মজুমদার ও তার প্রেমিক অজিত রায়কে দোষী সাব্যস্ত করল বারাসত আদালত। ৩০২, ১২০(বি) ধারায় দু-জনকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আগামীকাল মনুয়া ও অজিতের সাজা ঘোষনা করবে বিচারক বৈষ্ণব সরকার। এদিকে,রায়দানের সময় আদালতে হাজির ছিলেন অনুপমের পরিবার। ছিল নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও। রায়দানের পর এক সাক্ষাৎকারে অনুপমের মা কল্পনা সিংহ বলেন,”দিন নেই, রাত নেই। আমি সুবিচারের আশায় কোর্টে পড়ে থেকেছি। মনুয়া ও অজিতকে দোষী সাব্যস্ত করায় আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের আশা, বিচারক আগামীকাল ওদের (মনুয়া ও অজিত) সবোর্চ্চ শাস্তি দেবে”। তিনি আরও বলেন,”আমার চোখের জল বৃথা যাবেনা।চোখের জলের মূল্য বিচারক নিশ্চয় দেবে। সেই আশা ও ভরসা আমাদের রয়েছে আদালতের ওপর”। আদালতে মনুয়া ও অজিতের শরীরি ভাষা কেমন ছিল, সেবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কল্পনা দেবী বলেন,”অজিতকে একটু ভেঙে পড়তে দেখেছি। কিন্তু মনুয়া কোর্টের এজলাসে ঢোকার সময় হাসাহাসি করছিল! ওকে দেখে মনে হয়েছে ও(মনুয়া) কখনই এই ঘটনার জন্য অনুতপ্ত নয়”।এরপরই অনুপম হত্যাকান্ডের ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। সেই অবস্থাতেই কল্পনা সিংহ বলেন,”ঘটনার পর বাংলাদেশ থেকে যখন আমরা এখানে আসি, তখনও জানতে পারেনি যে অনুপম আর বেঁচে নেই। পরে, ঘটনার কথা জানতে পারি। ফোন করে খুনের ঘটনার কথা চেপে যাওয়া হয়েছিল।আমরা ভেবেছিলাম, অনুপমের স্ত্রী মনুয়ার হয়তো শরীর খারাপ। তাই,ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমার ছেলে যে বেঁচে নেই, এটা আমরা ভাবতেই পারছিনা। ওরাই (মনুয়া ও অজিত) ক্ষত বিক্ষত করে আমার ছেলেকে খুন করেছে। ওদের চরম শাস্তিই চাই”। তাঁরই মতো মনুয়া ও অজিতের সবোর্চ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছেন অনুপমের বাবা জগদীশ চন্দ্র সিংহ। তিনিও বলেন, “ওরা দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। আমার ছেলেকে নৃশংসতার সঙ্গে খুন করা হয়েছে।তাই, ওদেরও (মনুয়া ও অজিত) এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকার অধিকার নেই। মনুয়া আমাদের বৌমা নয়। ও একজন ডাইনি। যে তার প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে খুন করেছে। ওর ব্যবহার খুবই খারাপ।আমার আত্মীয় স্বজন, এমনকি সাংবাদিকদের সঙ্গেও ও(মনুয়া) দুর্ব্যবহার করেছে”। এই খুনের পিছনে কি শুধু পরকীয়া সম্পর্কই লুকিয়ে রয়েছে, নাকি অন্য কোনও কারন রয়েছে! এই প্রশ্নের উত্তরে জগদীশ বাবু বলেন,”না অন্য কোনও কারন নেই। পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কই রয়েছে খুনের পিছনে। সেটাই আমাদের মনে হয়েছে”। বাংলাদেশ থেকে পরিবারের প্রায় ২৫ জন সদস্য এখানে পড়ে রয়েছেন শুধুমাত্র রায়দান শুনবেন বলে”। অন্যদিকে, মনুয়ার আইনজীবী সুব্রত কুমার বসু বলেন,”প্রকৃত দোষীকে আড়াল করতেই পুলিশ মামলার গতিপথ ঘুরিয়ে দিয়েছে। সেটা মামলা চলাকালীন আমরা আদালতে বারবার তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, আজকের দিনে সেটা গ্রাহ্য হয়নি”। তিনি আরও বলেন,”পুলিশ মনুয়া ও অনুপমের সঙ্গে কোনও বৈরিতার প্রমান আদালতে দিতে পারেনি। অনুপমের পরিবারও আদালতে এসে কোনও সাক্ষ্য দেয়নি। ফলে, স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিলনা, সেই প্রসঙ্গ একবারের জন্যও আসেনি। পুলিশ কোনও কারন দেখাতে পারেনি, যে কেনো মনুয়া তাঁর স্বামী অনুপমকে খুন করতে যাবে। এটা উচ্চ আদালতে খালাসের মোকদ্দমা। আইনজীবী হিসাবে আমি একটু বলতে পারি”।রায় দেখার পর উচ্চ আদালতে যাওয়ারও চিন্তা ভাবনা এখন থেকে শুরু করে দিয়েছে মনুয়ার আইনজীবী।
অনুপমের পরিবার অনুপমের বাবা জগদীশ সিংহ ও মা কল্পনা সিংহ দুই দোষীর ফাঁসি চান ।তাঁরা জানালেন , আগামীকাল ফাঁসির সাজা ঘোষিত হলেই তাঁদের সন্তানের আত্মা শান্তি পাবে।